সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ‘ড্রাইভার সাব, আমার স্বামীরে আপনি মাইরেন না। আপনার পায়ে ধরি। ধর্মের বাপ ডাইক্যা বলতেছি, ওরে আপনি মাইরেন না।’ স্বামী ছালাউদ্দিনকে মহাসড়কে বাসের চাকায় পিষে মারার আগে চোখের জলে এভাবেই অনুনয়-বিনয় করেছিলেন পারুল আক্তার। তবে তার এ বুকফাটা কান্নায় মন গলেনি চালক ও তার সহকারীর। তাদের বর্বরতার শিকার হতে হয় অসহায় ওই দম্পতিকে। আলম এশিয়া পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছালাউদ্দিন। ঘটনার প্রতিবাদ করে পারুলও মারধরের শিকার হন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছালাউদ্দিন পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এলাকার শাহাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় থাকতেন।
পারুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত ছালাউদ্দিনও বাসের চালক ছিলেন। পলমল গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আনা-নেওয়ার চাকরি করতেন তিনি। পারুলও ওই গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিক। মাস চারেক আগে অসুস্থ হয়ে ছালাউদ্দিনের ডান পাশ অবশ হয়ে যায়। ফলে কাজে যেতে পারছিলেন না তিনি। ঈদের ছুটিতে নিঃসন্তান ছালাউদ্দিন তার স্ত্রীকে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়ি বেড়ানো শেষে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে চড়ে বাসায় ফিরছিলেন।
পারুল আরও জানান, বাসের সহকারীকে চালক পরিচয় দিয়ে ভাড়া কিছু কম নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তার স্বামী। এ নিয়ে তিনি ও তার স্বামীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
একপর্যায়ে চালকের সহকারী ছালাউদ্দিনকে লাথি মেরে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে পেয়ে ছালাউদ্দিন তার ভাই জামাল উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি জানান এবং বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াতে বলেন। পরে জামাল আরও পাঁচ-ছয়জনকে নিয়ে বাঘেরবাজারে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে বাসটি ওই স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়। তবে স্বজনরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছালাউদ্দিনকে লাথি মেরে মহাসড়কে ফেলে দেয় চালকের সহকারী। তবে দরজা বন্ধ করে পারুলকে নিয়েই চলে যেতে থাকে বাসটি। এরপর স্ত্রীকে নামিয়ে দিতে কান্নাকাটি করতে থাকেন ছালাউদ্দিন।
একপর্যায়ে কোনোরকমে উঠে বাসের সামনে অবস্থান নিয়ে গাড়ির গতিরোধের চেষ্টা করেন তিনি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে চালক। সঙ্গে সঙ্গে সবার সামনেই ছালাউদ্দিনকে চাপা দিয়ে দ্রুতবেগে বাস নিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকে ছালাউদ্দিনের। কিছুদূর গিয়ে পারুলকেও লাথি মেরে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়।
নিহত ছালাউদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন জানান, ভাইকে হত্যা না করার জন্য বাসের ভেতরে কান্নাকাটি করে বারবার অনুরোধ করেছিলেন ভাবি। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনরাও চালককে অনুরোধ করেছিলেন। তবে তাদের কোনো অনুরোধেই কর্ণপাত করেনি চালক ও তার সহকারী। সুপরিকল্পিতভাবে ছালাউদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই অভিযোগ করেন ছালাউদ্দিনের স্ত্রী।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি দেলোয়ার হুসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে আমতলা নামক স্থানে ছালাউদ্দিনের স্ত্রী পারুলকেও লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় কৌশলে চালক ও তার সহকারী পালিয়ে যায়। পরে হাইওয়ে পুলিশ আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো গ-১১-৬৩-৬৬) আটক করে।
জয়দেবপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, নিহতের ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply